তরিকুল ইসলাম, খুলনাঃ খুলনার কয়রা উপজেলায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্দেশনা না মেনে পছন্দের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রকৃত শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়ে মনোক্ষুন্ন হয়েছেন।
জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল কয়রা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের আয়োজনে ট্যাব বিতরণ করা হয়। এর আগে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে তালিাকা সংগ্রহ করেন উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস। যাচাই-বাছাইকালে কালিকাপুর চৌকুনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাঠানো তালিকায় শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম নিয়ে অনিয়ম পাওয়ায় তাদের ট্যাব দেয়া স্থগিত করা হয়। তবে বিতরণের পরে দক্ষিণ বেদকাশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ১ম হাসিবুর রহমান, ২য় আতিকুর রহমান ও ৩য় সাজ্জাত আলী কোন ট্যাব পাননি। তাদেরকে বঞ্চিত করে প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত তালিকায় সুবর্ণ বিশ্বাস (রোল ৪), লিলিমা আক্তার (রোল ৯ ) ও মুসলিমা আক্তার ( রোল ১৫) এর নাম পাঠানো হয় এবং সে অনুযায়ি তাদেরকে ট্যাব দেয়া হয়।
এছাড়া নবম শ্রেণির ৩য় নাজমুল এর স্থলে রেহেনা আক্তারকে ট্যাব দেয়া হয়। বঞ্চিত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ট্যাব পাওয়ার দাবি করেন। পাশাপাশি তাদেরকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির দাবি করেন। বিষয়টি জানা জানি হলে ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী খাইরুজ্জামান মিলন প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সকল শিক্ষার্থীর ট্যাব নিয়ে নেয়। এতে ট্যাবগ্রহণকারীরা মনোক্ষুন্ন হয়।
লিলিমা ও রেহেনা বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটি করে ট্যাব দেয়া হবে। সে অনুযায়ি জন্ম নিবন্ধন ও ছবি নিয়ে উপজেলা পরিষদে যাই। ট্যাব পেয়ে অনেক খুশি হই। ট্যাব বিতরণ নিয়ে কি হয়েছে সেটা জানিনা। তবে স্কুল খুললে ফেরত দেবে বলে ৩/৪ দিন পরে হেড ম্যাডাম আমাদের কাছ থেকে ট্যাব নিয়ে গেছে। ফেরত দিবে কিনা জানিনা, তবে এখন শুনতেছি অনিয়মের কথা। আমরাতো কোন দোষ করিনি। আমাদের বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ট্যাব দিয়েছে। আমরা গ্রহণ করেছি। এখন যদি না পাই তাহলে একদিকে বন্ধুদের সামনে চরম লজ্জায় পড়তে হবে, অন্যদিকে আমাদের আনন্দ দুঃখে পরিণত হবে।
সুবর্ণ বিশ্বাস বলেন, পড়ালেখার ক্ষতি হবে এ কথা বলে ট্যাব ফেরত নিয়েছে। পরীক্ষার পরে দিবেন বলেছেন। বিতরণের কি নির্দেশনা ছিল সেটাতো আমরা জানিনা। স্যারের কথা মত ছবি ও জন্মনিবন্ধন জমা দিয়েছিলাম। পরে ট্যাব দেন।
দক্ষিণ বেদকাশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, দ্রুত পাঠাতে যেয়ে অফিস সহকারীর তৈরি করা তালিকা আমি না দেখে স্বাক্ষর করি। উপজেলা পরিষদে যেয়ে ছাত্রীদের দেখে অবাক হই। তখন পরিসংখ্যান কর্মকর্তাকে বলতে চেয়েও আগে তালিকা পাঠানোয় সমস্যা হতে পারে এটা ভেবে আর বলিনি। সবগুলো ট্যাব আমার কাছে রেখেছি। প্রকৃত শিক্ষার্থীদের দিয়ে দিব। অফিস সহকারী খাইরুজ্জামান (মিলন) এর কাছে নির্দেশনার বাইরে তালিকা তৈরি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন সদ্বোত্তর দিতে পারেন নি। তার ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌমিত্র প্রসাদ সানা বলেন, আমরা এখনও ট্যাব পাইনি। প্রথমে যে তালিকা পাঠিয়েছিলাম সেখানে ভুলবসত মেধা তালিকার ৬ ও ৭ নং এর নাম দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে পরিসংখ্যান অফিস থেকে অবগত করার পরে সংশোধনী তালিকা পাঠিয়েছি।
উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মনোজ মন্ডল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে নবম-দশম শ্রেণির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের তালিকা নেয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ছবি ও প্রত্যায়ন জমা নেয়া হয়। পরে আমরা যাচাই-বাছাই করতে যেয়ে দুটি বিদ্যালয়ের সমস্যা ধরা পড়ে। সেই দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ট্যাব দেয়া স্থাগিত রাখা হয়।
আর দক্ষিণ বেদকাশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনিয়ম সম্পর্কে বিতরণের পরে জানতে পারি। প্রধান শিক্ষকরা অনিয়ম করে তালিকা ও প্রত্যায়ন দিয়েছেন। তাদের অনিয়মের বিষয়ে ইউএনও স্যারকে অবহিত করেছি। ইউএনও স্যারের পরামর্শ অনুযায়ি পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মমিনুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব বিতরণে কোন অনিয়মকারীকে ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।