শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
খুলনায় বিশ্ব এইডস দিবস পালিত জবি’র উপাচার্য প্রফেসর ড. সাদেকা হালিমকে খুবি উপাচার্যের অভিনন্দন সবার মাঝে দেশের উন্নয়নে কাজ করার মানসিকতা থাকা দরকার- মোংলায় সিটি মেয়র খুলনা-৫ আসনে ৭ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা ডুমুরিয়ায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ ধান বিতরণ খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রশীদুজ্জামানের মনোনয়ন জমা খুলনা-৫ আসনে আ.লীগ মনোনিত প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা প্রদান খুলন-৬ আসনে(কয়রা-পাইকগাছা) ১৩ দফা অ‌ঙ্গিকার নি‌য়ে নির্বাচনী মা‌ঠে নেওয়াজ মোর‌শেদ ডুমুরিয়ার থুকড়া ইয়ং বয়েজ ক্লাব কে ডা.দীন মোহাম্মদ খোকার জার্সি প্রদান চন্ডিপুরে দুর্যোগ ঝুকি হ্রাস অগ্রগতি মূল্যায়ন কর্মশালা অনুষ্ঠিত

খুলনায় নি‌য়োগকে কেন্দ্র ক‌রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্মম নির্যাতন

Reporter Name
  • আপডেট টাইম শনিবার, ৬ মে, ২০২৩
  • ৩২০ জন সংবাদটি পড়েছেন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ খুলনার কয়রা উপজেলার কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ‌্যাপক নজরুল ইসলামের উপর হামলা চালিয়েছেন মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক।
শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাত ১০টায় মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পুলিশ পাহারায় গভীর রাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।
শনিবার (৬ মে) সকালে আহত প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে ওখানে জটিলতা ছিল এটা আমরা আগে থেকে ধারণা পেয়েছিলাম। তারপরও আমরা চেষ্টা করছিলাম যাতে স্বচ্ছ নিয়োগ দিতে পারি। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির প্রতিনিধি হিসেবে আমার ওখানে যেতে শুক্রবার ১১ টা বেজে যায় । যাওয়ার পর বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছিলাম। ২টার সময় লিখিত পরীক্ষা শুরু করি। এরপর ভাইবা নিয়ে খাতা দেখি। মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহমুদ চেয়ারম্যান আমাকে বার বার একটা খাতা নিয়ে বলছিলেন এটা আমার কেন্ডিডেট। লিখিত পরীক্ষার সময় তিনি চেষ্টা করেন তার প্রার্থীকে সাহায্য করতে কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে থাকায় পারেনি। পরে তাকে বললাম আপনি এলাকার জনপ্রতিনিধি একটু শান্ত থাকেন। আমরা যখন খাতা দেখি একটা কোড মেনটেইন করি যাতে কোন খাতা কার সেটা না বুঝতে পারি। সেখান থেকে তিনি একটি খাতা দেখিযে বলেন এটা তার প্রার্থীর খাতা। এটা যেন খেয়াল রাখি। আমার সাথে মাদ্রাসা বোর্ডের ডাইরেক্টর জিয়াউল আহসান ছিলেন। যখন ভাইবা নিচ্ছিলাম তখন চেয়ারম্যান ডাইরেক্টর স্যারকে বলেন তার প্রার্থীকে ৮ এর মধ্যে ৭ দেওয়া যায় না? তখন তিনি বলেন, না যায় না তবে আপনি বললে ৬ দিতে পারি। লিখিত পরীক্ষায় ১৪ জনের মধ্যে ৬ জন পরীক্ষা দিল। সবাই ফেল করেছে। ৩০ এর মধ্যে পাশ মার্ক ১২ কেউ পাননি। তখন ডাইরেক্টর স্যার বললেন ৩ জন পাশ না করলে পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। এসময় চেয়ারম্যান ৩টি খাতা নিয়ে বলেন আমরা লিখে দেই। আমি বলি এটা হয় না। এমনিতে এখানে নানা অভিযোগ , বাইরে পুলিশ, শতশত মানুষ, সাংবাদিক, তার মধ্যে আপনি এ ধরণের প্রস্তাব দেন, দেওয়ালেরও কান আছে। এটা করা যাবে না। তখন আমরা যে রুমে ছিলাম তার দরজা বন্ধ করে দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসার যিনি প্রিন্সিপাল হতে চান তিনি বর্তমান ভাইস প্রিন্সিপাল। তিনি এ পর্যায় আমার পায়ে ধরে বসলেন। আমি অস্থিকর পরিস্থিতি থেকে একটু স্বাভাবিক হতে রুম থেকে বের হয়ে বাইরে বাতাসে হাঁটাচলা করি। তখন ডাইরেক্টর স্যার বলেন, এখানে আর থাকা যায় না চলেন চলে যাই। এ সময় চেয়ারম্যান এসে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। ডাইরেক্টর স্যারের প্রাইভেট কারের সামনে ডাইরেক্টর স্যার বসলেন। পিছনে আমি ও চেয়ারম্যান। সাথে যে পুলিশ ফোর্স ছিল না এটা খেয়াল করিনি। সভাপতি আমাকে আঘাত করে মোবাইল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। চেয়ারম্যানের বাড়ির একটু সামনে গাড়ি থামায়। যেখানে আগে থেকে ২০-৫০ জন লোক ছিল। সেই লোকজন গাড়ির দরজা খুলে আক্রমণ করলো আমাকে। মোবাইল নিয়ে গেল। বাড়ির ভিতর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। আমি একটি খুঁটি ধরে রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু তারা আমার হাতে এত মারে যে আর শক্তি রাখতে পারিনি। ডাইরেক্টর স্যার অনেক চেষ্টা করেছিলেন আমাকে রক্ষা করতে। কিন্তু চেয়ারম্যান বলেন, ওকে দেখিয়ে দেব নিয়োগ দিতে এসে নিয়োগ দিবে না কেন? আমাকে মাটিতে ফেলে রাখে। জ্ঞান ফিরে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একপর্যায় আমি চিৎকার করি ওরা আমার মুখে গামছা বেঁধে রাখে। আমি পেশারের রোগী হওয়ায় পেশার উঠে গেল। ডাক্তার এনে আমাকে পেশার ও ডায়বেটিকসের ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। আমি ওষুধ খাইনি। এর মধ্যে তারা বার বার চেষ্টা করে স্বাক্ষর নিতে না দিলে মেরে ফেলবে। এক পর্যায় আমার উপর পিস্তল ও ছুরি ঠ্যাকায়। রাত ৮টার দিকে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আসে আমায় দেখতে। তাদের ওষুধ না খাওয়ার ডাক্তার বলে, ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে না গেলে মরে যাবে। তখন আমি জোরে জোরে আমার বউয়ের নাম্বার বলতে থাকি যা ওই ডাক্তার মোবাইল নং নিয়ে যান। বের হয়ে আমার স্ত্রীকে ফোন দেন। আমার আঙ্গুল ব্যথা থাকায় আমি নিয়োগ পত্রে সই দিতে না পারায় ওরা বরফ এনে হাতে দেয়। ব্যথা কমলে ৪-৫ টা কাগজে সই নেয়। সই নিয়ে এম্ব্যুলেন্সে করে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়। ওইখান থেকে ডাক্তারদের সহযোগিতায় সবাইকে বিষয়টি জানাই। আমার সাথে যারা ছিল তারা কেউ কাউকে বিষয়টি জানায়নি। আমি যখন সই করি তখন দেখি ওই নিয়োগ পত্রে ডাইরেক্টর স্যারের সই রয়েছে। রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ পাহারায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমাকে আনা হয়েছে।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান (বিপিএম) বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর নজরুল ইসলামকে পুলিশ পাহারায় শুক্রবার রাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। শিক্ষক অভিযোগ করলে আইনগত সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, প্রফেসর নজরুল ইসলামের উপর হামলার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এসেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের ব্যবস্থা করা হবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ৪ মে জয়পুর শিমলার আইট দারুচ্ছুন্নাহ দা‌খিল মাদ্রাসায় দুটি প‌দে নি‌য়োগ পরীক্ষা হয়। ওই মাদ্রাসার সভাপ‌তি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের স্ত্রী। তার স্ত্রী সভাপতি হলেও সার্বক্ষ‌ণিক নি‌জে উপ‌স্থিত ‌থে‌কে পছ‌ন্দের প্রার্থী‌দের নি‌য়োগ দেন। পরীক্ষা কে‌ন্দ্রে স্বদলব‌লে প্রভাব বিস্তার করায় অ‌ধিকাংশ প্রার্থীরা ভ‌য়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ক‌রেন‌নি। নি‌য়োগ বো‌র্ডে কোন পদে না থাক‌লেও ক্ষমতার দাপ‌টে সব কিছু তি‌নি নিয়ন্ত্রণ ক‌রেন।
এর আ‌গে গত বছ‌রের ৯ ডি‌সেম্বর ‌বে-‌সিন-‌মিম বায়লারহারা‌নিয়া আ‌লিম মাদ্রাসায় ৫‌টি প‌দে জনবল নি‌য়োগ দেয়া হয়। ওই মাদ্রাসার ম‌্যা‌নে‌জিং ক‌মি‌টির বিদ‌্যুৎসাহী প‌দে র‌য়ে‌ছেন চেয়ারম‌্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। ওই মাদ্রাসায়ও সকল প‌দে তার পছ‌ন্দের প্রার্থী‌দের নি‌য়োগ দেয়া হয়। আয়া প‌দে অপ্রাপ্ত বয়স্ক একজন‌কে নি‌য়োগ দেয়া হ‌লে জনম‌নে নানা প্রশ্ন জন্ম দেয়। প‌রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়া ম‌রিয়াম না‌মে একজন‌কে আয়া প‌দে নি‌য়োগ দেয়া হয় ব‌লে অ‌ভি‌যোগ র‌য়ে‌ছে।
এর আগে ২০২২ সালের ২১ মার্চ সন্ধ্যায় ইউপি সচিব ইকবাল হোসেনকে তার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে পরিষদের কক্ষে আটকে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় ইউপি সচিব বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মারধরের মামলা করেন। পরে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন : ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরো সংবাদ

বর্তমান ভিজিটর

Total Visitors
2495149
296
Visitors Today
156
Live visitors
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া কপি রাইট বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Hwowlljksf788wf-Iu