সবুজ হুসাইন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের চকনোদবাটি সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসার লেখাপড়ার মান, শিক্ষকদের উপস্থিতি এবং ম্যানেজিং কমিটি তৈরি নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
১৬ ই নভেম্বর বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় মাদ্রাসায় শিক্ষক, কর্মচারী ১২ জন থাকার কথা থাকলেও দেখা মেলে ৪ জনের। ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রায় এক শতের মতো থাকার কথা থাকলেও সরজমিনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় উপস্থিতি মিলে প্রায় ৩০ জন।
অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী কে কিছু প্রশ্ন করলে মিলে ভয়ংকর তথ্য, শিক্ষার্থী বলতে পারে না তার রোল নাম্বার, বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে বলে সাপাহার (তিলনা)। মাদ্রাসা থেকে ঐ শিক্ষার্থীর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিঃমিঃ কীভাবে মাদ্রাসায় যাওয়া আসা করে এমন প্রশ্নের উত্তরে বলে মাদ্রাসায় প্রায় ৬ মাস আগে ভর্তি হয়েছি আজকেই প্রথম এসেছি। সরজমিনে উপস্থিতি প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জনের বাড়ি সাপাহার তারা সকলেই প্রথমবার এসেছে মাদ্রাসায়।
উপস্থিত শিক্ষক আব্দুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা কম তাই হাফেজিয়া মাদ্রাসার কিছু শিক্ষার্থী রাখা হয়েছে তারা শুধু পরীক্ষা দেয়। মাদ্রাসায় শিক্ষক, কর্মচারীর অনুপস্থিতির ব্যাপারে কথা বললে তিনি বলেন, শিক্ষাথী কম থাকায় শিকক্ষকরাও ঠিকমতো আসেন না, আপনারা আসার আগেই ২ জন শিক্ষক ক্লাস না থাকায় চলে গেলেন। ম্যানেজিং কমিটি গঠনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কমিটি গোপনীয়ভাবে তৈরি হয়েছে আমরা জানতে পারিনি। যদিও তপসীল হলে মাদ্রাসার দেওয়ালে নোটিস টাঙানোর কথা থাকে কিন্তু আমরা কোন নোটিস টাঙানো দেখিনি এবং ম্যানেজিং কমিটি গঠনের ব্যাপারে এলাকাবাসীও কিছু জানতে পারেনি গোপনীয়ভাবে এই কমিটি গঠন করেছে। নতুন কমিটির শুধু সভাপতির নাম শুনেছি অন্যান্য পদে কারা রয়েছে তাও জানতে পারিনি। উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা এ বিষয়ে কোন জবাব দিতে পারে না।
মুঠোফোনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মনোয়ারার সাথে এসব অনিয়মের বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি সবাই কে জানিয়েই গঠন হয়েছে তবে শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে তিনি কোন জবাব দেন নাই।
ম্যানেজিং কমিটি গঠনের ব্যাপারে পত্নীতলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এটিএম দিল্লুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নির্বাচন করা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় এ্যডহক কমিটির সকলের সম্মতিক্রমে শিক্ষা অফিসে মিটিংয়ের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা ম্যানেজিং কমিটিতে থাকতে ইচ্ছা পোষণ করেছে তারা আবেদন দিয়েছে। নিতীমালা অনুযায়ী আমরা আবেদন যাচাই বাছাই করার পর এ্যডহক কমিটির সকলের ভোটে দুলাল নামে এক ব্যক্তি কে সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করেছি। তফসীল নোটিস এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে তফসীল নোটিস টাঙায়ে দিতে বলেছি হয়তো কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী অথবা এলাকার কেউ ছিঁড়ে ফেলতে পারে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের অনুপস্থিতির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন এগুলোর জবাব ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিতে পারবেন।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দুলাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কমিটির সভাপতি হয়েছি সেটা জানিই না হঠাৎ শিক্ষকরা এসে আমাকে বললেন আপনি আমাদের মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়েছেন আপনাকে শিক্ষা অফিসে যেতে হবে। আমি সভাপতি হতে আগ্রহী নয়। অথচ শিক্ষা অফিসার বলেন, যারা আবেদন দিয়েছেন তাদের মধ্যেই কমিটি নির্বাচন করা হয়েছে। আবেদনের ব্যাপারে সভাপতি দুলাল কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেয়।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা বলেন, এখানে সরকার প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছে বিভিন্ন ফান্ড দিচ্ছে মাদ্রাসায় কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থী না থাকলে এবং নিয়োগ বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে গোপনীয়ভাবে যে অবৈধ ম্যানেজিং কমিটি গঠন হয়েছে তা বাতিল না করলে এমন মাদ্রাসা সচল না রাখাই ভালো।