ময়মনসিংহ থেকে মোঃ রমজান হোসেনঃ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার ১৫৯ টি গ্রামে নেই কোন বিদ্যালয়। ফলে তিন-চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাশের গ্রামের বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে অনেক শিশু শিক্ষার্থীদের। এ কারণে এক পর্যায়ে এসে ঝরে পড়ছে তারা।
অন্যদিকে নিজ গ্রামে কোন বিদ্যালয় না থাকায় মেয়েদের পড়াশোনা করাতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না অভিভাবকরা। এতে এলাকায় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা খুব একটা বাড়ছে না।
হালুয়াঘাট পৌর শহরসহ ১২টি ইউনিয়নের ছোট-বড় মিলে মোট গ্রাম রয়েছে ২৬৮টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৬৫ গ্রামে। বাকি গ্রামগুলোর মধ্যে বড় ৮৫টি গ্রামে নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অন্যদিকে পাশের ধোবাউড়া উপজেলায় সাতটি ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলে ১৬৪টি গ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর বড় ৭৪টি গ্রামে নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ধোবাউড়া উপজেলা জয়পুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পল্লী উন্নয়ন অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুল হক জানান, আমাদের ছেলেমেয়েরা এখনো সেই আদিকালের মতোই তিন-চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে লেখাপড়া করছে। অনেক শিশুর অভিভাবক যাতায়াত খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে ঝরে পড়ার হার আমাদের এলাকায় অনেক বেশি।
হালুয়াঘাট উপজেলার কয়রাহাটি গ্রামের সোহাগ মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে কলেজ রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলেমেয়েরা এসে লেখাপড়া করেছে। অথচ আমাদের ওয়ার্ডে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বাধ্য হয়ে দুই কিলোমিটার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক পার হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় এলাকার কোমলমতি শিশুদের। লালারপাড় ও কয়রাহাটি গ্রামের শিশুরা অল্প বয়সেই কৃষি আর মৎস্য আহরণ পেশায় জড়িয়ে পড়ছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার সূত্রধর বলেন, ‘বিদ্যালয়শূন্য গ্রামের তালিকা প্রস্তুত শেষে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
ধোবাউড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জহির উদ্দিন বলেন, ‘হাজার বিদ্যালয় প্রকল্পের আওতায় দুই বছর আগে একটি বিদ্যালয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল হক বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়ের জন্য জমি দান করেন, তাহলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা চাই, কোনো গ্রামের শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষার অভাবে অকালে ঝরে না পড়ে।