বুলু ডাক্তারের অকাল মৃত্যু কালীন
চিকিৎসা নিয়ে কিছু কথা
————————
রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বুলু সারাটা জীবন মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিৎ করেছেন। এলাকায় মানুষের কাছে তার সে সুনাম আছে। শেষ জীবনে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টা। আমার অফিসে বসে নিউজ করছিলাম। আমার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। আমার বড় ভাইয়ের ফোন। রিসিভ করলাম। ভাই বললেন তুই কোথায়। আমি বললাম অফিসে। ভাই বললেন বুলু অসুস্থ তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। শুনা মাত্র অফিস ছেড়ে বাইরে গিয়ে দাড়ালাম। দেখলাম আমার ভাবি আর আমার ছোট ছেলে ভ্যানে করে নিয়ে আসছে। ভাইকে বললাম কি সমস্যা ভাই আমাকে ইশারায় বোঝালেন রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাচ্ছি। আমি দৌড়ে এলাম অফিস বন্ধ করে মাহেন্দ্র যোগে হাসপাতালে পৌছালাম। দেখতে পেলাম আমার অসুস্থ ভাইকে ভ্যানের উপর শোয়ায়ে দায়িত্বরত নার্স নানা তালবাহানা করছে। তখন আমার অসুস্থ ভাই বলছে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমাকে বেডে নাও অক্সিজেন দাও। তার ভ্যানটি ঠেলে কেউ উপরে উঠাবে তেমন কেউ নাই। আমার ভাইয়ের কষ্ট দেখে আমি আর আমার ছেলে দুজনে ভ্যান ঠেলে উপরে নিয়ে যায়। আমি দৌড়ে গিয়ে ট্রলি নিয়ে আসলাম। অনেক কষ্ট করে নিজেরাই ধরে ভাইকে ট্রলিতে নামালাম। তারপর ওয়ার্ডে নিয়ে জনৈক্য নার্স আমার হাতে একটি ফর্দ ধরিয়ে দিলেন। এই ওষুধগুলো আনতে হবে। আমার মাজা ভেঙে যাচ্ছে আমাকে বেডে দাও। কিন্তু আমার ভাইকে কেউই বেডে তোলেনি। অক্সিজেন দেয়ার ৩ মিনিট পর বলে অক্সিজেন শেষ। আমি দেখতে পাচ্ছি ভাইয়ের শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। দায়িত্বরত ডাক্তার কি সব পুশ করে বললেন তাকে খুলনায় নিয়ে যান। অক্সিজেন না থাকার কারনে দোতলা তেকে নিচতলায় এনে এম্বুল্যান্সে উঠানোর আগেই আমার ভাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ সময় আমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার নার্সদের আচরণ ছিল খুবই দুঃখজনক। আমি হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় বলেছিলাম সকালে আসবো পেট্রোল দিয়ে হাসপাতাল জালিয়ে দেবো।
তারপরেও ভাইকে নিয়ে গাজী মেডিকেল, সিটি মেডিকেল সবশেষে ২৫০ বেড হাসপাতালে নিয়ে ডেড সার্টিফিকেট নিয়ে বাড়ি ফিরলাম তখন রাত ১১টা। এলাকার মসজিদের মাইকে ভায়ের মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। রাতে যখন ভাইয়ের গোসল চলছে। ঠিক তখন সমবেদনা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ সঙ্গীতা চৌধুরী, মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ সরফুদ্দিন। কিছু সময় পর ফোন করে দূঃখ প্রকাশ করলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আনিছুর রহামান। তিনি প্রথমে আমার পরিচয় জানতে চায়লেন। তারপর বললেন আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। কারন আমি খুব ভালো একজন কর্মী হারালাম। আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। এজন্য থাকতে পারলামনা। আমি আমার ক্ষোভের কথাগুলো তাকে জানালাম। তিনি আবারো আমাকে শান্তনা দিয়ে বললেন আপনি শান্ত থাকেন। আমি ঢাকা থেকে ফিরে বিষয়টি দেখবো। ঢাকা থেকে ফিরে তিনি কি দেখলেন কিছুই বুঝলাম না। তার আগমনের পর থেকেই মূলত সরকারি এই হাসপাতালটি এখন মানুষ মারার ফাদে রূপান্তর হয়েছে। দেখার দায়িত্ব কার ?