নিজস্ব প্রতিবেদকঃখুলনা মহানগরীর পথে পথে, মোড়ে মোড়ে মৌসুমী পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার পাশে কিংবা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পিঠা খাওয়া এখন অতি পরিচিত দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে খুলনায়।
কর্মজীবী মানুষ চলতি পথে কিংবা সন্ধ্যার আড্ডায় নাশতাটা সেরে নিচ্ছেন চিতই, ভাপা, পান পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের শীতের পিঠা দিয়ে। পুরো শীতজুড়ে চলবে এ ব্যবসা। চাইলেই যে কেউ পারছেন সেখান থেকে শীতের পিঠার আস্বাদ নিতে। তবে গরম-গরম ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠার মূল আকর্ষণ শর্স্যের বা ঝাল শুঁটকির ভর্তা।
রবিবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে মাটির চুলায় পিঠা তৈরি করছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি দোকানের সামনে স্বাদের পিঠা খাওয়ার ধুম লেগেছে। নতুন চালের পিঠা খেতে অনেক সময় কাড়াকাড়ি বেঁধে যায় এ দুই দোকানে। খুব কম মূল্যে পছন্দমতো পিঠার স্বাদ নিতে পারছেন সাধারণ মানুষজন।
খুলনা নগরীর রূপসা ঘাট, মডার্ন মোড়, পিটিআই মোড়, দোলখোলা মোড়, গফ্ফারের মোড়, শিশু হাসপাতাল রোড, তারের পুকুর পাড়, পিকচার প্যালেস মোড়, ক্লে-রোড, স্টেশন রোড, খানজাহান আলী রোড, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তার মোড় আর ফুটপাতে গড়ে উঠেছে অগণিত অস্থায়ী পিঠার দোকান। এসব দোকানের বেচাবিক্রিও বেশ ভালো।
দোলখোলা মোড় এলাকার অস্থায়ী পিঠার দোকানি খালেদা বিবি জানান, বছরতিনেক ধরে দোলাখোলা এলাকায় পিঠা তৈরি করছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে জীবনযাপনের জন্য পিঠা বানিয়ে বিক্রি শুরু করেন তিনি। খালেদা বলেন, সীমিত খরচে ভালো লাভের আশায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করছি।
তিনি জানান, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ কেজি চালের গুড়ার পিঠা বিক্রি হয়। ২ হাজার টাকা খরচ করে তিনি প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা করেন।
পিঠা বিক্রেতা খালেদা আরও বলেন, অভাবের সংসারে শীতের মৌসুমে ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে চারশ পিঠা বিক্রি হয়। খরচা বাদ দিয়ে দিনে প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় হয়। পিঠা তৈরিতে খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে। তাই অল্প সময়ে বেশি আয় হয় বলে পিঠা তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি।
নগরীর তারের পুকুর পাড়ে পিঠা কিনতে আসা জামাল বলেন, গ্রামের বাড়িতে শীতের সময় পিঠা খাওয়ার আনন্দঘন মুহূর্তগুলো শহুরে জীবনে এখন স্মৃতি। এখন শহরেই মিলছে নানা রকম পিঠা। শীতের পিঠার এ রসনা বিলাসের সুযোগ হাতছাড়া করি না। প্রায় কিনে নিয়ে যাই বাসায়। তবে বিরক্তির বিষয় একটি তারের পুকুর পাড়ে কখনও লাইনে না দাঁড়িয়ে পিঠা কেনা যায় না।
পিঠা খেতে খেতে রিকশা চালক আমান মোল্লা বলেন, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ে। তখন গরম পিঠা খেতে খুব মজা লাগে।
মহানগরীর দোলখোলা মোড়ে পিঠা কিনতে আসা শিক্ষার্থী সাদিয়া চাঁদনী বলেন, গ্রামের বাড়িতে শীতের সময় পিঠা খাওয়ার আনন্দঘন মুহূর্তগুলো শহুরে জীবনে এখন স্মৃতি। এখন শহরেই মিলছে নানা রকম পিঠা। শীতের পিঠার এ রসনাবিলাসের সুযোগ হাতছাড়া করি না। প্রায় কিনে নিয়ে যাই বাসায়। তবে বিরক্তির বিষয় একটি দোলখোলা মোড়ে কখনও লাইনে না দাঁড়িয়ে পিঠা কেনা যায় না।
স্কুল শিক্ষিকা রাবেয়া বেগম বলেন, ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ঘরে পিঠা বানানোর সময় তেমন হয় না। সে কারণে বাইরের দোকানের পিঠাই একমাত্র ভরসা।