আজকের তারিখ: বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০৬ বিকাল | ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জ্বালানি রূপান্তর ও কার্বণ নির্গমন হ্রাস বাংলাদেশের NDC 3.0 তে অঙ্গিকার--- বাহলুল আলম


বাংলাদেশের NDC 3.0 বা Nationally Determined Contribution – তৃতীয় সংস্করণ কার্বন নির্গমন হ্রাসে জাতীয়

পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী বিশ্বের গড়

তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমিত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।

COP28 (দুবাই)–এ গৃহীত প্রথম বৈশ্বিক মূল্যায়ন (Global Stocktake – GST-1)–এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ

সরকার ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের (United Nations Framework Convention on Climate Change)

UNFCCC–তে NDC 3.0 আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দিয়েছে। সে মোতাবেক NDC 3.0 নথিটি বর্তমানে UNFCCC-এর

ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের জলবায়ু অঙ্গীকারের এক নতুন মাইলফলক নির্দেশ করে।

কার্বণ নির্গমন হ্রাসে বাংলাদেশ ২০২২ সালকে বেজ লাইন ধরে যে হিসেব করা হয়েছিলো তাতে উল্লেখ করা

হয়েছে গ্রীনহাউস গ্যাস (GHG- Greenhouse Gas) নির্গমনের প্রধান ৪ টি খাত বিবেচনা করা হয়, তা হলো

জ্বালানী (Energy), কৃষি-বনায়ন ও অন্যান্য ভূমি ব্যবহার (AFOLU-Agriculture, Forestry and Other Land Use),

শিল্প প্রক্রিয়া ও পণ্য ব্যবহারের খাত (IPPU Industrial Processes and Product Use), এবং বর্জ্য খাত (Waste)।

ঐ সময়ে বাংলাদেশের মোট কার্বন নির্গমন ছিল ২৫২.০৪ মিলিয়ন টন (১০০% ধরে) CO₂ সমতুল্য (MtCO₂eq -

Million tonnes of carbon dioxide equivalent)। এর মধ্যে জ্বালানী খাত সবচেয়ে বড় উৎস, যা ১২৩.০১ মিলিয়ন টন

(৪৮.৮১%), AFOLU যা ৯৫.৩৫ মিলিয়ন টন (৩৭.৮৩%), বর্জ্য খাত ২৬.৯৫ মিলিয়ন টন (১০.৬৯%) নির্গমনের

জন্য দায়ী, এবং IPPU ৬.৭৩ মিলিয়ন টন (২.৬৭%) কার্বণ নির্গমন করছে।

NDC 3.0 পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি মতে বাংলাদেশ ব্যবসা শিল্প- বনিজ্য ও উৎপাদন যেমন আছে (BAU

Business-As-Usual) তেমন চলতে দিলে অতিরিক্ত নীতি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বা নির্গমন হ্রাসের উদ্যোগ

নেওয়া না হয় তাহলে ২০৩৫ সালে বাংলাদেশের মোট গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪১৮.৪০ মিলিয়ন টন CO₂

সমতুল্য (MtCO₂eq) পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে জ্বালানী খাত প্রধান উৎস হিসেবে প্রাধান্য রাখবে,

যা মোট ২৬৪.০০ মিলিয়ন টন CO₂eq (৬৩.১০%) নির্গমনের জন্য দায়ী। জ্বালানী খাতের মধ্যে প্রধান অবদান

(contributors) হলো উৎপাদন শিল্প (২৬.০১%), বিদ্যুৎ উৎপাদন (১৪.৭৪%), এবং ব্রিক-ভাটা (৬.১২%)। দ্বিতীয়

অবস্থানে রয়েছে AFOLU খাত যা মোট ১১০.৮৯ মিলিয়ন টন CO₂eq (২৬.৫০%) নির্গমন সৃষ্টি করবে। এর প্রধান

উৎস হলো পশুপালন (১২.৮০%) এবং কৃষি (৯.২৫%)। এর বাইরে বর্জ্য খাত (Waste sector) ৩৫.২১ মিলিয়ন টন

CO₂eq (৮.৪২%) এবং শিল্প প্রক্রিয়া ও পণ্য ব্যবহার (IPPU) ৮.৩০ মিলিয়ন টন CO₂eq (১.৯৮%) নির্গমনের

জন্য দায়ী হবে।

NDC 3.0 পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি মতে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো বা নিয়ন্ত্রনের টার্গেট ২০৩৫

সালের মধ্যে মোট ৮৪.৯৭ মিলিয়ন টন CO₂ সমতুল্য (MtCO₂e) নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

জ্বালানী খাতে ৬৯.৮৪, AFOLU- ১২.৭১ , west ১.৭০, এবং IPPU-০.৬৪। এই ৮৪.৯৭ মিলিয়ন টনের মধ্যে

নিজস্ব অর্থায়নের (unconditional) লক্ষ্য হিসেবে ২৬.৭৪ মিলিয়ন টন এবং বৈদেশিক অর্থ সহায়তা প্রাপ্তি

সাপেক্ষ্যে শর্তসাপেক্ষ (conditional) লক্ষ্য হিসেবে ৫৮.২৩ মিলিয়ন টন CO₂ সমতুল্য হ্রাস অন্তর্ভুক্ত

রয়েছে। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে, বাংলাদেশের মোট নির্গমন ২০৩৫ সালে ৪১৮.৪০ মিলিয়ন টন CO₂

সমতুল্য থেকে কমে ৩৩৩.৪৩ মিলিয়ন টন CO₂ সমতুল্য-এ পৌঁছাবে।

এবার আসা যাক জ্বালানী খাতে; শুধুমাত্র জ্বালানী খাতে NDC 3.0 এর ধারা ৩.২ অনুযায়ী, জ্বালানি খাতে

নির্ধারিত প্রশমনমূলক পদক্ষেপগুলো (mitigation actions) বাস্তবায়িত হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে মোট

৬৯.৮৪ মিলিয়ন টন গ্রীনহাউস গ্যাস হ্রাস করা হবে। এর মধ্যে লক্ষ্য হিসেবে ৪০% নিজস্ব অর্থায়নের

(unconditional) এবং বৈদেশিক অর্থ সহায়তা প্রাপ্তি সাপেক্ষ্যে তথা শর্তসাপেক্ষ (conditional) ৬০ % সমতুল্য

গ্রীন হাইজ গ্যাস হ্রাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস হিসেবে সৌর শক্তি,

বায়ুশক্তি, গ্রিড দক্ষতা বৃদ্ধি, গ্যাস অপ্টিমাইজেশন এবং কয়লার ব্যবহার হ্রাস–কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া

হয়েছে।

২০৩৫ সালের মধ্যে শুধুমাত্র জ্বালানি রূপান্তর ও কার্বণ নির্গমন হ্রাসে কয়েকটি খাতে বাংলাদেশের NDC

3.0 তে যে অঙ্গিকার তথা পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করা হয়েছে, তা বিশ্লেষন করলে দেখা যায়;

সড়ক পরিবহন খাত (Road Transport) : গণপরিবহন ব্যবস্থায় উন্নয়ন আনতে MRT (Metro Rail Transit) ও BRT

(Bus Rapid Transit) সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় নির্মিত হবে MRT–1, MRT–2, MRT–4,

MRT–5N এবং MRT–5S লাইন, আর অন্যান্য বড় শহরে উন্নয়ন হবে BRT-Bus Rapid Transit সিস্টেমে। ২০৩৫

সালের মধ্যে ঢাকা শহরের ৩০% ব্যক্তিগত গাড়ি ও ২৫% বাস হবে বৈদ্যুতিক যানবাহন (EVs) আধুনিক, দ্রুত

ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা, যেখানে নির্দিষ্ট লেনে চলার ফলে যানজট কমে ও সময় সাশ্রয় হয়। এটি

নগরীর বায়ুদূষণ হ্রাসে সহায়ক এবং টেকসই শহর গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিবে।


রেল পরিবহন খাত (Rail Transport): সৌরবিদ্যুৎচালিত রেলওয়ে স্টেশন গড়ে তোলা হবে এবং অব্যবহৃত রেলওয়ে

জমির ৩০%–এ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে (২০% বিনাশর্তে দেশীয় অর্থায়নে ৮০% শর্তসাপেক্ষে

আন্তর্জাতিক সহায়তাভিত্তিক)। ৩৪৮ কিলোমিটার রেললাইন বিদ্যুৎচালিত করা হবে (২০% বিনাশর্তে, ৮০%

শর্তসাপেক্ষে)। পাশাপাশি আধুনিক রোলিং স্টক ক্রয় এবং কালার লাইট সিগন্যালিং সিস্টেম চালু করার

পরিকল্পনা রয়েছে।

উৎপাদন ও নির্মাণ, উন্নত ইট উৎপাদন প্রযুক্তি খাত (Improved Brick Production Technology): ২০৩৫

সালের মধ্যে মোট ইটের ৪০% চাহিদা পূরণ হবে নন–ফায়ার্ড ইট ও কংক্রিট ব্লকের মাধ্যমে, যা প্রচলিত

পোড়ানো মাটির ইটের বিকল্প হবে। এর মধ্যে ২৫% লক্ষ্য বিনাশর্তে , আর ৭৫% লক্ষ্য শর্ত সাপেক্ষে।

শিল্প খাতে শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি খাত (Industrial Energy Efficiency): শিল্পখাতে ১০% শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি

করা হবে (৪০% বিনাশর্তে, ৬০% শর্ত সাপেক্ষে)। শিল্প স্থাপনাগুলোতে রুফটপ সোলার সিস্টেম স্থাপন

উৎসাহিত করা হবে এর ৩০% বিনাশর্তে এবং ৭০% শর্তসাপেক্ষ, যা দেশের সামগ্রিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি

লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

অন্যান্য খাত: বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও আবাসিক শক্তি দক্ষ যন্ত্রপাতির ব্যবহার (Energy-Efficient Appliances)

: গৃহস্থালি, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে শক্তি দক্ষ লাইট, ফ্যান, টিভি, ওভেন, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন,

কুলিং সিস্টেম, ওয়াটার হিটার ও পিউরিফায়ার ব্যবহারের মাধ্যমে ১০% শক্তি সাশ্রয় নিশ্চিত করা হবে (৫০%

বিনাশর্তে, ৫০% শর্তসাপেক্ষ)।

সরকারি ভবনে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন (Solar Systems in Government Buildings): বিদ্যমান সরকারি ভবন,

প্রতিষ্ঠান, স্কুল ও হাসপাতালের ৫০%–এ, এবং নতুন ভবনের ১০০%–এ রুফটপ সোলার সিস্টেম স্থাপন করা

হবে। এর মধ্যে ৩০% বিনাশর্তে এবং ৭০% শর্তসাপেক্ষ লক্ষ্য।

আধুনিক রান্না ব্যবস্থা খাত (Modern Cooking Systems) : ২০৩৫ সালের মধ্যে অন্তত ২০% রান্নার জ্বালানি

আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎস থেকে সরবরাহ করা হবে, যাতে প্রচলিত জ্বালানির ওপর নির্ভরতা

কমানো যায়।

বাংলাদেশের NDC 3.0 কেবল একটি জলবায়ু প্রতিশ্রুতি নয়, এটি একটি সমন্বিত জ্বালানি রূপান্তর কৌশল, যার

মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণ, শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি, ও কার্বন নির্গমন হ্রাসের পাশাপাশি

ন্যায্য ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের

পাশাপাশি বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সহযোগী, ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত অংশগ্রহণ হবে বাংলাদেশের জলবায়ু

নেতৃত্বের নতুন দৃষ্টান্ত।

কিন্তু এই স্বপ্ন বিলাশী এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১১৬.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

বিনিয়োগের প্রয়োজন, যার মধ্যে ২৫.৯৫ বিলিয়ন ডলার নিঃশর্ত (Unconditional) পদক্ষেপ এবং ৯০.২৩ বিলিয়ন

ডলার শর্তসাপেক্ষ (Conditional) পদক্ষেপে ব্যয় হবে।

বাংলাদেশের NDC বাস্তবায়নের পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে উচ্চ প্রযুক্তি ও

নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প বাস্তবায়ন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। পাশাপাশি, উন্নত কার্বন হ্রাস প্রযুক্তি ও

দক্ষ মানবসম্পদ সীমিত এবং শক্তি, শিল্প, পরিবহণ ও কৃষি খাতে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।

নির্ভুল ডেটা সংগ্রহ ও মনিটরিং ব্যবস্থার ঘাটতি, আন্তর্জাতিক তহবিল ও প্রযুক্তি সরবরাহে অসমতা, এবং

ক্লাইমেট-ইনটেন্সিভ শিল্প যেমন পেট্রোলিয়াম ও রফতানিমুখী খাতে উচ্চ নির্গমন কমানোর চ্যালেঞ্জও

প্রক্রিয়াকে জটিল করে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নীতি পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমে

ধারাবাহিকতা অনিশ্চিত থাকে, এবং সামাজিক সচেতনতার ঘাটতির কারণে সাধারণ মানুষ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে

জলবায়ু পরিবর্তন ও কমানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বোঝাপড়া কম। এই সব কারণ একত্রে NDC লক্ষ্য

অর্জনের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশের NDC লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন সমাধান গ্রহণ করা যেতে পারে। অর্থায়নের নতুন উৎস

হিসেবে জলবায়ু তহবিল, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) এবং বৈশ্বিক COP-উদ্দীপিত তহবিল

ব্যবহার বৃদ্ধি করা যেতে পারে। প্রযুক্তি স্থানান্তর ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ,

স্থানীয় উদ্ভাবন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এছাড়া, শক্তি, কৃষি, শিল্প ও পরিবহণ খাতের

মধ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ তৈরি, নির্ভুল মনিটরিং, রিপোর্টিং ও যাচাই ব্যবস্থার উন্নয়ন,

দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় নীতিমালা ও প্রণয়িত আইনের মাধ্যমে নীতিগত ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা, এবং স্থানীয়

কমিউনিটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প খাতে পরিবেশ শিক্ষার সম্প্রসারণের মাধ্যমে সচেতনতা ও অংশগ্রহণ

বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি, নবায়নযোগ্য শক্তি ও কম কার্বন শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রণোদনা

ও সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শিল্প রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব।


(লেখক পরিচিতি : বাহলুল আলম, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল খুলনাতে বসবাসকারী একজন জলবায়ু বিশ্লেষক)

author

Editor

জ্বালানি রূপান্তর ও কার্বণ নির্গমন হ্রাস বাংলাদেশের NDC 3.0 তে অঙ্গিকার--- বাহলুল আলম

Please Login to comment in the post!
adds

you may also like