বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

রমেক হাসপাতালে আইসিইউ বন্ধ, পানি সংকটে চরম দূর্ভোগ

Reporter Name
  • আপডেট টাইম শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০২২
  • ২২৯ জন সংবাদটি পড়েছেন

 সোহেল রানা, রংপুর সদর প্রতিনিধিঃ রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ১৫ দিনেও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) গ্যাস আউটলেট ও অক্সিজেন সঞ্চালনে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হয়নি।

এ কারণে ১১ মার্চ হতে হাসপাতালের দশ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ বন্ধ রাখা রয়েছে। এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা জীবনাশঙ্কাপূর্ণ ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে। অন্যদিকে হাসপাতালের পাঁচতলা ভবনের বর্ধিত অংশে গত চার দিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় ছয়টি ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এসব সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত দুই সপ্তাহে এক সাংবাদিকসহ অন্তত ছয়জন মুমূর্ষু রোগী আইসিইউতে সেবা না পেয়ে মারা গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের অনেকের অভিযোগ, কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে সংকটাপন্নদের বাঁচিয়ে রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে, সেটা দেখার বিষয়।

বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে যদি আইসিইউ সেবা না পাওয়া যায়, তাহলে গরিব রোগীরা কোথায় যাবে? নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইসিইউতে কর্মরত একজন স্টাফ জানান, গত ১১ মার্চ শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে আইসিইউয়ের অক্সিজেন লিকেজ থেকে একটি ফ্যানে আগুন ধরেছিল। ওই ঘটনার পর সেখান থেকে মুমূর্ষু রোগীদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। সেদিন রাত থেকেই আইসিইউ বন্ধ রয়েছে। তবে সিসিইউতে সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে।

এদিকে আইসিইউ সেবা বন্ধ থাকায় গত ২৩ মার্চ হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন এক জীবনাশঙ্কাপূর্ণ সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পীরগঞ্জের সাংবাদিক শাহ্ মো. সাদা মিয়া। তিনি বলেন, গত বুধবার পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও করতোয়া পত্রিকার সংবাদদাতা মোকছেদ আলী সরকার সন্ধ্যায় অসুস্থ হলে প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে রাত ৯টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু আইসিইউ বন্ধ থাকায় লাইফ সাপোর্টে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে সিসিইউতেই তার মৃত্যু হয়।

এর আগে ২০ মার্চ সোমবার রাতে নীলফামারী থেকে আসা আশরাফ নামে সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তি গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ওই ব্যক্তিকে কোনো চিকিৎসক দেখেননি। বরং পরিবারের লোকেরা সংকটাপন্ন এ রোগীকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেও বিনাচিকিৎসায় পরেরদিন মেডিসিন ওয়ার্ডে মৃত্যু হয় বৃদ্ধ আশরাফের। এ রকম আরও বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউনিটটির দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আইসিইউয়ের ভেতরে কোনো রোগী নেই। সেখানকার বেডগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। কর্মরত নার্সসহ অন্য স্টাফরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। আইসিইউর এই বেহাল চিত্র ক্যামেরাবন্দি করতে নিষেধ করেন দায়িত্বরতরা। এমনকি কথা বলতেও রাজি হননি তারা।

হাসপাতালের আইসিইউয়ের রেজিস্ট্রার ডা. জামাল উদ্দিন মিন্টু জানান, ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর রংপুরে ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়। অনেক দিন হওয়ায় মাঝে মাঝে গ্যাস আউটলেট ও অক্সিজেন সঞ্চালনে ত্রুটি দেখা দেয়। সমস্যা সমাধানে আইসিইউ বন্ধ রেখে ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে।এদিকে হাসপাতালে শুধু আইসিইউ সেবাই বন্ধ নয়, গত চারদিন ধরে দুটি পাম্প নষ্ট হওয়াতে বর্ধিত অংশে পানি সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালের পাঁচতলা ভবনের বর্ধিত অংশে অর্থোপেডিক, গ্যাস্ট্রোলজি, ইউরোলজি, মেডিসিন ওয়ার্ড রয়েছে। নিচতলায় রয়েছে অর্থোপেডিক এবং চক্ষু, নাক-কান-গলা বিভাগের বহির্বিভাগ। বিশাল এই হাসপাতালের পুরোনো ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি সরবরাহের জন্য একাধিক পানির পাম্প থাকলেও নতুন ভবনের বর্ধিত অংশে মাত্র দুটি পানির পাম্প রয়েছে।

ওই দুটি পাম্প দিয়েই বর্ধিত অংশের ছয়টি ওয়ার্ড ও তিনটি বহির্বিভাগের সর্বত্র পানি সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু ২০ ও ২১ মার্চ পরপর দুদিনে দুটি পাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়াতে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম বিপাকে রয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। কষ্ট করে অনেকেই বাইরে থেকে পানি সরবরাহ করছে।

আইসিইউ সেবা চালু এবং পানি সরবরাহ সচল করতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আইসিউইয়ের অক্সিজেন সঞ্চালনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সাময়িক তা বন্ধ রয়েছে। সমস্যা সমাধানে গণর্পূত বিভাগের সাথে কথা হয়েছে। তারা আইসিইউর ১০টি বেডের ৫০টি আউটলেটে অক্সিজেন সঞ্চালনে সৃষ্ট ত্রুটি সমাধানে কাজ করছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আইসিইউ ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। একইসঙ্গে নষ্ট পাম্প দুটিও মেরামতের চেষ্টা চলছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন : ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরো সংবাদ

বর্তমান ভিজিটর

Total Visitors
2756968
173
Visitors Today
49
Live visitors
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া কপি রাইট বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Hwowlljksf788wf-Iu